গোপাল ভাঁড়


নবাবের অষ্টাদশ-পর্ব মহাভারত কথা
একবার মুর্শিদাবাদের নবাবের খেয়াল হল, হিন্দুদের মত আমাকে নিয়ে মহাভারত রচিত হোক। যেমনি ভারা তেমনি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে নির্দেশ পাঠালেন, আপনাদের অর্থাৎ হিন্দুদের অনুকরণে, তাকে নিয়ে একটি নতুন মহাভারত পন্ডিতদের দিয়ে লিখে দিতে হবে একমাসের মধ্যে। সেইরূপ পন্ডিত অতি শীঘ্র নবাব দরবা পাঠান। যিনি রচনা করবেন তাঁকে প্রচুরআসরাফি পুরষ্কার দেওয়া হবে।
নবাবের চিঠি পেয়ে মহারাজ এমন চিন্তায় পড়লেন যে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলেন। কারণ এমন কে পন্ডিত আছে যে, সে হিন্দুদের মত করে মহাভারত লিখে দিতে সক্ষম হবে। গোপাল বাহিরে গেছিল কয়েকদিন, সেদিনই রাজসভায় এসেছে- এসে মহারাজকে রাজসভায় উপস্থিত হতে না দেখে খবর নিয়ে জানতে পারল যে, মহারাজ নাকি এক বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত আছেন, সেজন্য রাজসভায় আসেন নি। কিন্তু বিষয়টা কি সে সম্বন্ধে কেউই কিছু বলতে পারল না। গোপালের সব জায়গায় এমন কি অন্দরবহলেও অবারিত দ্বার, সেজন্য অন্দরমহলে গিয়ে মহারাজকে পাকড়াও করল। অন্দর মহলে গোপালকে দেখে মন ক্ষুন্ন হলেও একদিকে প্রিয় বয়স্য অন্যদিকে বিপদে আপদের বুদ্ধিদাতা গোপালকে দেখে মনে একটু ভরসা পেলেন, এই মনে করে যে, এই বিপদের সময় আর কিছু না হোক গোপাল হয়ত একটু বুদ্ধি বাতলে দিতে সক্ষম হবে। গোপালের কাছে অকপদে সমস্ত খুলে বললেন নবাবের খেয়ালের কথা।
মহারাজের মুখে সমস্ত শুনে গোপাল বলল এই সামান্য কথার জন্য এত ভাবনা চিন্তা না করে আমার উপর ছেড়ে দিন। আমাকে পাঠাচ্ছেন বলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে খান দান ঘুমোন। যা করবার আমি করব। মহারাজ গোপালের উপর বিশ্বাস করে নবাবের কাছ চিঠিও গোপাল কে পাঠিয়ে দিলেন। গোপাল গরদের কাপড় পরে, উড়নী গাড়ে দিয়ে, গলায় বড় বড় তুলসীর মালা ঝুলিয়ে কপালে তিলকের ফোঁটা কেটে মাথায় মস্ত টিকিতে একটা বড় ফুল বেঁধে নবাব দরবারে দিয়ে উপস্থিত হলো। মহাপন্ডিত গোপালকে নবাব দেখে খুব খুশি হলেন। কুর্নিশ করে গোপাল বললে, নবাব বাহাদুর আপনি যদি পাচঁ হাজার টাকা খরচ করেন তবে একমাসের মধ্যে আপনার মনের মত মহাভারত তৈরী করতে পারবে। এর কম সময়ে হবে না এবং এর জন্য কোন ভাবনা চিন্তা করবেন না।
নবাব গোপালের কথা শুনে বললেন, পন্ডিত মশায় আপনাকে পাঁচ হাজার কেন আমি দশ হাজার টাকা দেব, আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন মহাভারত লিখে শেষ করুন। এই বলে গোপালকে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন। গোপাল একমাসের সময় নিয়ে মহাভারত লেখা আরম্ভ করে দিল।
নবাবের ঘন ঘন তাগাদার পর আঠাশ দিনের মাথায় নবাবের মহাভারত হাজির হয়ে পন্ডিত মশায় বললেন, নবাব বাহাদুর মহাভারত লেখা প্রায় অন্তিম পর্যায়, খালি একটা বিষয়ে আটকে আছে, সেটা হচ্ছে, আমাদের মহাভারতে দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী যধীষ্ঠীর, ভীম, অর্জুন, নকুলও সহদেব নামে খ্যাত। সে সব উপস্থিত সকলেই আপনারা জানেন। কিন্তু আপনার বেগম সাহেবার পঞ্চ স্বামীর কি কি নাম তা আমার জানা নেই। আপনি বললেই লিখে দেব এবং আমার লেখা মহাভারত সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখন বলুন নবাব সাহেব আপনার বেগম সাহেবার পঞ্চস্বামীর নাম কি কি এইটুকু ছাড়া আর সব লেখা শেষ হয়ে গেছে। এই নামগুলি বসিয়ে দিলেই আপনার মনের মত মহাভারত সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়ে যাবে।
নবাব বাহদুর কথাশুনে তোবা তোবা করে, কানে হাত দিয়ে বললেন, কি কথা বলছেন পন্ডিত মশায়! আমার বেগম সাহেবার কি কখনও আমি ছাড়া কোনও স্বামী থাকতে পারে! দরবারে এত লোকের সামনে এই কথা শুনে নবাব লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে বললেন, আমার আর মহাভারতের দরকার নেই, আপনি এখন আসতে পারেন পন্ডিত মশায়।
গোপাল করজোড়া প্রার্থনা করে বলল, সে কি নবাব বাহাদুর আমি এত কষ্ট করে একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কতভেবে চিন্তে মহাভারত লিখলাম আপনি বাতিল করে দিলেন। মহানুভব নবাব একথা শুনে পন্ডিত মশাইকে বললেন, আপনি কষ্ট করে লিখেছেন সেজন্য আপনাকে পারিশ্রমিক দ্বিগুন করে দিচ্ছি। আপনি পারিশ্রমিক নিয়ে মহাভারতের নাম মুখে না এনে বাড়ি চলে যান। এই বলে খাজাঞ্চিকে ডেকে টাকা দেওয়ার আদেশ দিলেন।
খাজাঞ্চি টাকা দিলে গোপাল আনন্দ চিত্তে দিয়ে হাজির হলো মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ সভায়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের মহাভারত লেখার কাহিনী শুনে খুবই আনন্দিত হলেন, কারণ এমন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে মনে মনে খুব আনন্দিত হলেন। গোপাল আর এক দফা পুরষ্কার পেয়ে আনন্দিত হল। মহারাজ গোপালকে বললেন তোমার তুলনা তুমিই। তুমি যাত্রায় রক্ষা না করলে আমি খুবই অসুবিধায় পড়তাম। যাক যাত্রা থেকেমুক্তি পেলাম
চোরের আজব সাজা
একদিন গোপালের জ্বর হওয়ায় সে সেদিন রাজসভায় যেতে পারেনি। মহারাজ সভাসদদের নিয়ে নানা আলাপ আলোচনা করতে করতে হঠাৎ বললেন, আমার সভার মধ্যে এমন কি কেউ আছে, যে গোপালের ঘর থেকে কিছু চুরি করে আনতে পারে? যদি কেউ পারে, তবে সে সামান্য জিনিস হলেও আমি তাকে বিশেষভাবে পুরষ্কৃত করব। তোমরা কেউ রাজী থাকলে বল।
মহারাজের পুরষ্কার লোভেও কেউ রাজি হল না গোপালের ঘরে চুরি করতে। কারণ বড় চতুর সে। তার চোখে ধুলো দেওয়া সহজ নয়। ধরা পড়লে নাকালের শেষ থাকবে না। নাকানি চোবানি তো খেতে হবেই, আর সে তার প্রতিশোধ একদিন না একদিন নেবেই নেবে এবং অশেষ দুর্গতির সীমা থাকবে না।
ভূপাল নামে একটি লোক পুরষ্কারের লোভে সেদিন মধ্যরাত্রে গোপালের বাড়িতে সিদ কেটে প্রবেশ করল। গোপাল আগে থেকেই রাজসভার কথা জানতে পেরেছিল, তাই সে লোভি লোকটাকে জব্দ করার জন্য তৈরি হয়ে রইল। গোপালের ঘরের দেওয়ালে সিদ। গোপাল পূর্ব প্রস্তুতি মতো একটা মানুষের বিষ্ঠাপূর্ণ কলসির উপরে গোটাকতক টাকা রেখে দিয়েছিল এবং সেখানে নিজে একপাশে আত্নগোপন করে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটি সিদ কেটে যখন ঘরের মধ্যে মাথা গলিয়ে ঢুকে দেখল যে, সামনেই একটা টাকভর্তি কলসী বসানো আছে। সে আর কালবিলম্ব না করে তাই মাথায় তুলে নিয়ে মনের আনন্দে রাজবাড়িরে দিকে এগোতে যেতেই গোপাল ঢিল ছুঁড়ে ব্রাহ্মণের মাথার কলসীটা ভেঙে দিল। কলসী চুরমার হয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটির সারা শরীর বিষ্ঠাতে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন ভোর হয়েছে। গোপাল বেরিয়ে বলল, কি বাবা চুরি করা হল। মহারাজ পরে গোপালের মুখে এসব কথা শুনে বেশ আনন্দিত হলেন
সর্দি মোছার পাছা
সেদিন বড় গঞ্জের হাটবার। সকলকে সেই হাটেবাজার করতে যেতে হয়। গোপাল গঞ্জের বাজারে চলেছে গ্রামের কয়েকজন চেনাজানা লোকের সঙ্গে গল্প করতে করতে। যেতে যেতে হঠাৎ গোপালের নজরে পড়ে, সামনে একটি মেয়েও যাচ্ছে বোঝা মাথায় নিয়ে। গোপাল ভালভাবে নজর দিয়ে দেখতে পেলে, মেয়েটি ভারি বোঝার জন্য হোক বা অন্য কোনও কারণে হোক কাঁদতে কাঁদতে আগে আগে চলেছে, আর ঘন ঘন একটা হাত দিয়ে সর্দি মুছছে পাছায় ঘষছে আনমনে। কাঁদলে সকলেরই নাকি সর্দি আসে এমনিতেই। সে একহাতে বোঝার টাল সামলাচ্ছে, আর এক হাত দিয়ে নাকের সর্দি টেনে পাছার মুছছে। আর অভ্যাসটাতো অল্প বিস্তর অনেকেরই থাকে, আর তাই তেমন নতুন কি?
গোপালের থামায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল, আর মুখে দেখা গেল বাঁকা হাসি। গোপালের মাথায় তো সব সময় কত রকম বুদ্ধি ফিকিরের আসর। সে মনে মনে ভাবলে একটু মজা না করলেই নয়। মেয়েটি গরীব হলেও চলন অন্যান্য আদব কায়দা দেখে ভাল ঘরের মনে হোল। আর মেয়েটিরও ছেলে মানুষি মিষ্টি চেহারা। কিলবিল করছিল ফন্দি গুলো গোপালের মাথায়। তারই একটাকে সে ছেড়ে দিলে মেয়েটির কান্না থামাতে আর তার মুখে হাসি টেনে আনতে তার এবং তার মনে ব্যথা ভোলানোর জন্য।
চকিতে গোপাল এগিয়ে যায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার ভান করে- নাকের সর্দি জোরে ভেতরে টানার শব্দ করে, যেন কত সর্দি জমে আছে। তারপরই হঠাৎ একদলা সর্দি বের করে মেয়েটির পেছনের কাপড়ে মুছে দিল। মেয়েটি চমকে উঠে। সে ঘুরেই মুখ ঝামটা দিয়ে বললে, একি করলেন মশাই। আপনার সর্দ্দি আমার গায় মুছতে আপনাকে কি কেউ বলেছে? আপনার লজ্জা করল না? ছি ছি, বেহায়া কোথাকার? মেয়ে ছেলের গায়ে হাত দিলেন- ভদ্রলোক হয়েও এই কি উচিত কাজ? আমি এখনই রাজদরবারে নালিশ করব, কেন আপনি আমার পাছায় হাত দিলেন?
গোপাল প্রাণখোলা হাসি হেসে তখন বলল, তা বাছা তুমি রাগ করছ কেন? তোমার সর্দ্দি মোছার বহর দেখে আমি ভাবলাম, এটা বোধ হয় সদ্দি মোছার পাছা। গোপালের সঙ্গীরা হো হো করে হেসে উঠে। মেয়েটির মুখেও হাসির রেখা দেখা দেয়। গোপাল তখনও বললে, দেখ বাছা, তোমার চোখের সামনে, চোখের জল দিয়ে তো তোমার পেছনের কাপড়ের সর্দ্দি ধোওয়া যাবে না? তাই বাজারে পৌছাতে পৌছাতে আমার চোখের জল দিয়ে তোমার পাছার কাপড়ে সর্দ্দির দাগ ধুয়ে দেব। আমি আবার এমন ছোট মেয়ের কান্না সইতে না পেরে কেঁদে ফেলি যে।
মেয়েটি ফিক করে হেসে উঠে। তার বাবার মত কথা বলতে শুনে। মেয়েটি তখন সব দুঃখ ভুলে যায়
একি মগের মল্লুক
এক পাড় মাতাল রাস্তা দিয়ে যেতে যেত গোপালের বাড়ির রোয়াকে বসে হেড়ে গলায় গান জুড়ে দিল। গোপাল তার ছেলেদের ডেকে বললে, বেটাকে বেধে ঘা কতক দে তো। এপাধা নি ব্যাটাকে দে প্যাদানি।
মাতাল ফিক করে হেসে বলল কি বাওয়া। তোমারও কি নেশা হল নাকি? যা নয় তাই বলতে শুরু করলে। আমি কি মনের সুখে গান গাইতেও পারবনা বাওয়া। একি মগের মল্লুক না কি, যা বলবে তাই শুনতে হবে? আর বাঁধবে কেন ঠাকুর- আমি কি ভোগের চাল কলা ফল না কি?
গোপাল এই কথা শুনে না হেসে পারল না। গোপালের হাসি দেখে মাতাল গান ছেড়ে শুরু করল তখন তিড়িং বিড়িং নাচ। পাধা নি
ধরে আনতে বেঁধে আনা
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার পেয়াদাকে ডেকে বললেন, ওরে ভজহরি ব্যাপারীকে একবার ডেকে আনবি তো। ভজহরি সরেস গুড়ের কারবার করত। পেয়াদা ব্যাপারীকে একেবারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাজসভায় হাজির করলে। ভজহরি গোপালকে ধারে মাল দিতে চাইত না, তাই তার ওপর গোপাল চটে ছিল। পেয়াদা তাকে আজ একেবারে রাজসভায় বেঁধে এনেছে বলে গোপাল মনে মনে বেশ খুশিই হল। বলল,- বেশ হয়েছে শালাকে বেধেই এনেছে।
রাজা কিন্তু পেয়াদার ওপর চটে গিয়ে বললেন, আমি ভজহরিকে ডেকে আনতে বললুম, আর তুই কিনা একেবারে বেধে নিয়ে এলি? তোকে আমি বরখাস্ত করব। তোর বেশ বাড় হয়েছে, কেন তুই বেধে এনেছিস- আগে কৈফিয়ত দে, নয়তো এখনি তোকে বরখাসত করলাম। তোর কিছু বলার থাকে বল।
পেয়াদা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আর করবনা হুজুর। এবোরের মত বেয়াদপি মাপ করুন। নাহলে খেতে না পেয়ে মরে যাবো।
গোপাল পেয়াদা পক্ষ নিয়ে ওকালতি করে মোলায়েম স্বরে বললে, হুজুর একে বরখাস্ত করবেন না- হচ্ছে জাত পেয়াদা। পেয়াদারা ধরেআনতে বললে বেধেই আনেআর ডেকে আনতেই বলায় বেধে আনায় প্রকৃত পেয়াদার মতোই কাজ করেছে। যদি জাত পেয়াদা না হত সে কখনই বেঁধে আনত না। কথাটা ঠিক কিনা এবার মহারাজ আপনি বিবেচনা করে দেখুন।
গোপালের কথায় রাজা হেসে ফেললেন এবং অতি করিৎকর্মা পেয়াদাকে ক্ষমা করে দিলেন সেবারের মত। বললেন, এবারের মত অবশ্য মাপ করলাম, আর যেন কখনও এমন না হয় মনে রাখবি
জাত-কুল সব গেল
গোপালের স্ত্রী নিজেই দেখাশোনা করে বড় মেয়েকে এক বামুনের বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়ের মেয়ে বড় হোল একদিন। তারই বিয়ের নিমন্তন্নে গোপালেরা উপস্থিত। স্ত্রী একান্তে ডেকে বললে, হ্যাঁ গা, আমাদের বড় মেয়ের জামাই নাকি জাতে নাপিত বামুন নয়। কিন্তু সে সম্বন্ধ তুমি কিছু জান কি?
স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বললে, আর চেপে যাও- আমিও আসলে বামুন নই, আমি জাতিতে নাপিত। তোমার বাপের কাছে জাত ভাঁড়িয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। তুমি জাতকুল হারালেও আমি মোটেই জাতকুল হারাইনি। জাতকুল আবার কি? ধন মানেই সব। যার ধন আছে সেই সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। অতএব, এর জন্য তোমার ভাবনা চিন্তা করার কিছুই নেই। তুমিও হয়ত এই রকম কোন তাঁতির মেয়ে হবে
হিসাবী লোক
গোপাল একবার দূর দেশে বেড়াতে যাবে বহুদিন ভাড়াটে বাড়িতে রয়েছে, একে একে অনেক আসবাবপত্র জমা হয়েছে। সে সব আসবাব সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, অথচ বেচে যেতেই ইচ্ছে নেই। হেকে পয়সা পাবে। বেচে গেলে টাকা পয়সা যা পাওয়া যাবে এখন, তাতে ফিরে এলে সে টাকায় তো আর খরিদ করা যাবে না, ভালো ভালো আসবাবপত্র প্রায় সব গোপাল সকলের কাছ থেকে দান হিসাবে পেয়েছে তা তো বেচা উচিত নয়। তাহলে লোক কি বলবে? তাই কি করা যায় কথাই বার বার ভাবছে। আবার আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার জন্যে ওই ভাড়া বাড়িটা বজায় রাখার কোনো মানে হয় না। কারণ অনেক টাকা ভাড়া গুনতে হবে। ভেবে ভেবে অবশেষে একটা ফন্দী বের করলে। গোপাল একটা বড় বন্ধকী দোকানে আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে অনেক টাকা দামের আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে মাত্র চারশো টাকায়। দোকানদার ওইসব আসবাব রেখে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে রাজি ছিল। কিন্তু গোপাল ভাবল টাকার চেয়ে জিনিস রাখারই গরজ তার। যত কম টাকা নেওয়া যায়, সুদ টানতে হবে তত কম। সেজন্য হিসেব করে দেখলে- চারশো টাকার দরুন মাসে তার যে সুদ দিতে হবে, একটা ঘর ভাড়া করে জিনিসগুলো রেখে যেতে তাকে মাসে মাসে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হবে। গোপাল বেশ কিছুদিন পর ফিরে এসে টাকা দিয়ে আবার আসবাবগুলি ছাড়িয়ে নতুন ঘরে উঠল

Comments